ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ছাত্র-যুবকদের সম্পৃক্ত করে ব্যাপক তৎপরতা এবং টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তামূলক প্রচারণার আহ্বান জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
বুধবার (২৬ মার্চ) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
এতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক হাসিনা বেগম, অধ্যাপক ড. কামরান উল বাসেত, আব্দুল্লাহ মো. ফেরদৌস খান এবং নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ঈদযাত্রায় মাত্র ৩/৪ দিনে ঢাকা থেকে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা করবেন।
এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে আন্তঃজেলায় প্রায় ৪ কোটি মানুষ যাতায়াত করবেন। অল্প সময়ে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ পরিবহন করার মতো মানসম্মত গণপরিবহন দেশে নেই। ট্রেন ও নৌ-পরিবহন সেবা অপর্যাপ্ত। তাই অধিকাংশ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক, পিকআপ, ত্রুটিপূর্ণ বাস, অটোরিকশা, নসিমন-ভটভটি এবং মোটরসাইকেল ইত্যাদির মাধ্যমে সড়ক পথেই যাত্রা করবেন।
এই বিপুল ঘরমুখো মানুষের চাপে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নানা ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও সড়কের চাঁদাবাজি, বাড়তি ভাড়া আদায় এবং অনিরাপদ যানবাহন চলাচল বন্ধে তেমন কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন না। এটা প্রতি বছরের বাস্তব চিত্র।
বিজ্ঞপ্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নেতারা বলেন, এবারের ঈদযাত্রার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দুটি। একটি হলো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সড়ক-মহাসড়কে ব্যাপকভাবে চলাচল করবে, একইসঙ্গে মোটরসাইকেলের ব্যবহারও বাড়বে, যা সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা ব্যাপক বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
দ্বিতীয়টি হলো, রাতে যানবাহনে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা অতিমাত্রায় ঘটতে পারে। বিশেষ করে আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে এই আশঙ্কা বেশি। একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এটা করবে। এজন্য সারাদেশের সড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ছাত্র-যুবদের সম্পৃক্ত করে ব্যাপক পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। থানায় থানায় কন্ট্রোল রুম সচল রাখতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে। এই ব্যবস্থা না করলে সারাদেশ ডাকাতি-ছিনতাই নৈরাজ্যকর অবস্থায় পৌঁছাতে পারে।
ঈদযাত্রা নিরাপদ করার জন্য সরকারি উদ্যোগ ঈদপূর্ব ঘরমুখো যাত্রায় যতটা সক্রিয় থাকে, ঈদের ফিরতি যাত্রায় ততোটা সক্রিয় থাকে না। ফলে ফিরতি যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। এটা প্রতি ঈদ মৌসুমের চিত্র। ঈদপূর্ব ঘরমুখো যাত্রা কয়েক দিনব্যাপী হয়। কিন্তু ঈদের পরে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ একযোগে ফিরতি যাত্রা করেন। এ সময় মানুষের আর্থিক সঙ্গতি কম থাকে। ফলে তারা যেনতেনভাবে যাতায়াত করেন, যা সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কাজ করে। তাই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান অব্যাহত রাখতে হবে। সরকার সমন্বিত উদ্যোগে সকল স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করে একটি আনন্দপূর্ণ ঈদ উৎসব সম্পন্ন করবে বলে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন প্রত্যাশা করছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মনে করে, নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে কমপক্ষে ৩ বছরের একটি মধ্য-মেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই পরিকল্পনার অধীনে রেললাইন সম্প্রসারণ করে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করে মানুষকে ট্রেনমুখো করতে হবে। নদীপথ সংস্কার ও জনবান্ধব করতে হবে। সড়কে বিআরটিসি’র রুট বিস্তৃত করে বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সাথে সড়কের সকল মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন বন্ধ করতে হবে। এসব উদ্যোগ ঠিকমতো বাস্তবায়ন করলে পরবর্তী সকল ঈদযাত্রা স্বাভাবিক ও নিরাপদ করা সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।