গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ৩৬টি বিমান হামলার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এসব হামলায় শুধু নারী ও শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সংস্থাটি এই যুদ্ধের মানুষের প্রাণহানীল তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় আরও সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের সম্প্রসারিত অবরোধ আদেশ গাজাবাসীদের ক্রমশ সংকুচিত এলাকায় জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করছে। সংস্থার মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি সতর্ক করেছেন, গাজাজুড়ে চলা এই সামরিক হামলাগুলো কোনও নিরাপদ স্থান রাখেনি।
তিনি জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত গাজায় আবাসিক ভবন ও বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে ইসরায়েলের ২২৪টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩৬টি হামলা সম্পর্কে আমাদের কার্যালয় যাচাই করে তথ্য পেয়েছে, যেখানে এ পর্যন্ত নিহতদের তালিকায় শুধু নারী ও শিশু রয়েছে।
শামদাসানি জানান, গত ৬ এপ্রিল দেইর আল বালাহের আবু ইসা পরিবারের একটি আবাসিক ভবনে হামলায় এক মেয়ে, চার নারী ও চার বছর বয়সী এক ছেলে নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইসরায়েলের অবরোধ আদেশে ফিলিস্তিনিদের যেসব এলাকায় যেতে বলা হচ্ছে, সেখানেও হামলা চলছে। খান ইউনিসের আল মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুতদের তাবুতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও সেখানে হামলা অব্যাহত রয়েছে। ১৮ মার্চ থেকে এ ধরনের অন্তত ২৩টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
গাজার সর্বদক্ষিণের গভর্নরেট রাফাহতে ৩১ মার্চ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি ব্যাপক স্থল অভিযানের আদেশ জারি করে। ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের সেনারা গাজায় বড় অঞ্চল দখল করছে এবং সেগুলোকে বাফার জোন হিসেবে ঘোষণা করছে, যেখান থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বুধবার বলেছেন, বড় অঞ্চল দখল করে সেগুলোকে নিরাপত্তা অঞ্চলে পরিণত করা হচ্ছে, যার ফলে গাজা আরও ছোট ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
এ প্রসঙ্গে শামদাসানি বলেন, স্পষ্ট করে বলতে হবে, এই তথাকথিত অবরোধ আদেশ আসলে স্থানান্তর আদেশ, যা গাজাবাসীদের ক্রমশ সংকীর্ণ এলাকায় ঠেলে দিচ্ছে। দখলকৃত ভূখণ্ডে বেসামরিক জনগণকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা জোরপূর্বক স্থানান্তরের শামিল, যা জেনেভা কনভেনশনের চতুর্থ ধারার গুরুতর লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। শামদাসানি বলেন, আমাদের কার্যালয়ে রেকর্ড করা তথ্য অনুসারে, সামগ্রিকভাবে নিহতদের মধ্যে বড় একটি অংশই শিশু ও নারী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক নাগরিক হতাহতের নিন্দা জানিয়ে আসছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তের দাবি জানালেও তেল আবিব এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা শুধু হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।