শুক্রবার, ১৪ চৈত্র, ১৪৩১ | ২৮ মার্চ, ২০২৫ | ভোর ৫:৩২

রাষ্ট্রের নাম ও সংবিধানের মূলধারা অক্ষুণ্ন রাখার পক্ষে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

রাষ্ট্রের নাম ও সংবিধানের মূল নীতিমালা অক্ষুণ্ন রাখার পক্ষেই মতামত দিয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দেওয়া প্রস্তাবে দলটি এ অবস্থান উল্লেখ করেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি স্বাধীনতার ঘোষণায় উল্লিখিত – সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারকেও যুক্ত করার প্রস্তাব রেখেছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের পক্ষে মতামত দিয়েছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাবনার উপর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে স্পেডশীটে পার্টির মতামত জমা দেয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন সচিবালয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে বদিউল আলম মজুমদার এসব মতামত গ্রহণ করেন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আনছার আলী দুলাল ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক মতামত জমা দেন।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ১২২টি প্রস্তাবে একমত, ২১টিতে আংশিক একমত, আর ২৩টিতে একমত নয় বলে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে পার্টির পক্ষ থেকে পরবর্তীতে বিস্তারিত মতামত জানানোর কথা বলা হয়েছে।

কমিশনে প্রদত্ত চিঠিতে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক উল্লেখ করেন, স্প্রেড শিটে যেভাবে উত্তর চাওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি সম্পর্কে যেভাবে মতামত দিতে বলা হয়েছে তাতে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকৃত অবস্থান ব্যক্ত করা দুরূহ।

তিনি বলেন, সংস্কারের মধ্য দিয়ে এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে, রাষ্ট্র কোন নাগরিকের মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, লিংগীয় পরিচয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের জন্য তার নাগরিকদের মধ্যে কোন বৈষম্য করবেনা। একইসাথে এই সংবিধান নাগরিকদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকারের এমন সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, যা সাংবিধানিক বা প্রশাসনিক কোন আইন, বিধি বা অধ্যাদেশ দিয়ে বাতিল, সংকুচিত বা স্থগিত রাখতে পারবেনা।

নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক পথে সরকার পরিবর্তনে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। অনেক দিন ধরেই গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থা টাকার খেলায় পর্যবসিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে জাতীয় সংসদও অনেকটা বিত্তবানদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। অথচ নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবে টাকার খেলা বন্ধে নির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব নেই বলেও জানান তিনি।

সাইফুল হক বলেন, আমরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও এক্তিয়ার কমানোর পক্ষে নই। স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন যাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করা দরকার।

তিনি বলেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বয়স ২৫ বছর রাখার পক্ষেই মত দিয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সংসদের উচ্চতর কক্ষে ১৫০ আসন নির্ধারণ করে দলসমূহের সারাদেশে প্রাপ্ত মোট ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে আসন নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছে।

সাইফুল হক বলেন, এতগুলো কমিশন গঠিত হলেও সমাজে নির্মম বৈষম্য বিলোপে কেন কোন কমিশন গঠিত হয়নি তা বোধগম্য নয়। দুর্বৃত্ত রাজনীতির সাথে দুর্বৃত্ত অর্থনীতির যে অশুভ মেলবন্ধন তা অব্যাহত থাকলে প্রকট বৈষম্য দূর হবেনা এবং সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংস্কারও আখেরে টেকসই হবেন।

প্রদত্ত চিঠিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে এখন জাতীয় সমঝোতা গড়ে তোলার এক অসাধারণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যেহেতু অনেক আগে থেকেই সংস্কারের কথা বলে আসছে সে কারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ তুলনামূলক সহজ হয়েছে। বিশেষ কোন পক্ষ অবলম্বন না করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কারের প্রশ্নে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগুলো দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ সহজতর হবে। এক্ষেত্রে চাপাচাপি করতে গেলে যেটুকু অর্জন করা যেত তাও হয়তো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। তিনি সংস্কার কমিশনের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করেন এবং সাফল্য অর্জনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের কথা জানান।

ট্যাগ :

সর্বশেষ প্রকাশিত

ইউটিউবে যুক্ত হোন

সম্পাদক:

কপিরাইট ২০২৫ | ফাইন্ডিং পলিটিক্স